প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এই আর্টিকেলে। প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার বহু উপকারিতা রয়েছে এসব সম্পর্কে জানতে এবং কোন পদ্ধতিতে খাবেন, কতটি করে খেতে হবে, কখন খেতে হবে এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এই আর্টিকেলে।
খেজুরের আরবি নাম তুমুর,এটি মরুভূমির একটি জনপ্রিয় ফল। এটা মূলত মরুভূমির দেশেই বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। এই ফলের অনেক উপকারিতা রয়েছে এবং এটি ঔষধি গুনসম্পন্ন। তাই বলা যায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম। ওজন বাড়াতে বা কমাতে চাইলে খেজুর আপনার ডায়েটে রাখতে পারেন।পেজ সূচিপত্রঃপ্রতিদিন খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
- প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
- প্রতিদিন কয়টি খেজুর খেতে হবে
- খেজুর খাওয়ার সঠিক সময় কোনটি
- প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে কি উপকার হয়
- প্রতিদিন খেজুর খেলে যেসব রোগ থেকে মুক্তি মিলবে
- কি উপায়ে খেজুর খেলে শরীরের শক্তি ও এনার্জি বজায় থাকবে
- খেজুর খেলে কি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ে
- খেজুর পানিতে ভিজিয়ে খেলে কি হয়
- খেজুর কাদের খাওয়া উচিত নয়
- কোন খেজুর খাওয়া উচিত নয়
- বেশি খেজুর খেলে কি ক্ষতি হয়
- লেখকের মন্তব্যঃ প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার উপকারিতা অনেক। খেজুর ড্রাই ফুড জাতীয় ফল। এটি খুব সুমিষ্ট ফল। এতে চিনির মাত্রা বেশি থাকে কারণ খেজুরে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট এর মাত্রা বেশি পরিমাণে থাকে। তাই খেজুর খেলে ইনস্ট্যান্ট এনার্জি পাওয়া যায়। এছাড়া খেজুরে অনেক রকমের ভিটামিন ও মিনারেল আছে খেজুরে উপস্থিত সেলেনিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ এর মত খনিজ পদার্থ হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। এসব উপাদান আমাদের শরীরের হাড়কে মজবুত ও শক্তিশালী করে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।
যাদের রাতে ঘুমের সমস্যা রয়েছে তারা খেজুর খেলে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। খেজুর শরীরে মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণে সাহায্য করে থাকে। আর এই হরমোন নিঃসরণের কারণে রাতে ভালো ঘুম হয়।
খেজুর খেলে দেহের শক্তি বৃদ্ধি পায়, হজমের উন্নতি হয়,হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করে,চুলপড়া রোধ করে,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। খেজুর খেলে একজন অসুস্থ মানুষ খুব তাড়াতাড়ি সুস্থতা লাভ করে এবং প্রাণবন্ত মানুষ হয়ে ওঠে। এতেই পুষ্টিকর খেজুরের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসের গুরুত্ব প্রতিফলিত হয়।
প্রতিদিন কয়টি খেজুর খেতে হবে
প্রতিদিন কয়টি খেজুর খেতে হবে তা না জানলে এর সঠিক মাত্রার প্রয়োগ করে উপকার পাওয়া সম্ভব নয়। পুষ্টিগুণে ভরপুর খেজুরে আছে ভিটামিন,ফাইবার,ক্যালসিয়াম,আয়রন,ফসফরাস,পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংক। খেজুর একজন সুস্থ মানুষের শরীরে আয়রনের চাহিদা প্রায় ১১ ভাগই পূরণ করে। তাই প্রতিদিন ২-৪ টি খেজুর খাওয়া যেতে পারে।
তবে প্রতিদিন কয়টি খেজুর খেতে হবে এটা নির্ভর করে নিজ নিজ শরীরের ফিটনেসের উপর। কারণ খেজুর ছোট ফল এবং শুকনা ফল হলেও এটা অনেক বেশি পরিমাণে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং বেশি চিনিযুক্ত ফল। তাই পরিমিত মাত্রায় খাওয়াই ভালো। সাধারণত প্রতিদিন সকালে দুই থেকে তিনটি খেজুর খাওয়া ভালো। আর যদি বেশি পরিশ্রমের কাজ করা হয়ে থাকে যেমন খেলাধুলা বা জিম করা তবে চার পাঁচটি খেজুর খাওয়া যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগী এবং কিডনি রোগীরা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেজুর খাবেন।
খেজুর খাওয়ার সঠিক সময় কোনটি
খেজুর খাওয়ার সঠিক সময় কোনটি তাহলে কে জানতে চান। আসলে খেজুর খাওয়া নির্দিষ্ট কোন সময় নেই যে কোন সময় খাওয়া যায় তবে দিনের তিনটি সময়ে খেজুর খেলে উপকারিতা কয়েক গুণ বেশি পাওয়া যায়।যেমনঃ সকালে খালি পেটে,সকালে খাবারের পর এবং দুপুরের খাবারের আগে,বিকেল বেলা বা সন্ধ্যা বেলায়। এছাড়া রোজার মাসে সেহেরী এবং ইফতারের সময় খেজুর খাওয়া ভালো।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে কি উপকার হয়
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে বহু উপকার পাওয়া যায়। শুকনা খেজুর খাওয়া যায় তবে ভালো ফলাফল পেতে হলে রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে সেই ভেজানো খেজুর পানি সহ খাওয়া ভালো।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা গুলো নিচে দেয়া হলোঃ
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
- পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হয়।
- ব্রেন ভালো হয়।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- হাড়ের গঠন মজবুত হয়।
- দাঁতের মাড়ি শক্ত হয়।
- হাঁটুর ব্যথা বা জয়েন্টের ব্যথা ভালো হয়।
- চোখের সমস্যা দূর হয়।
- টেনশন দূর হয় ফলে মন সতেজ থাকে।
- গর্ভবতী মা ও সন্তানের জন্য বিশেষ উপকারী।
- শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- চুল পড়া রোধে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
- কৃমির সমস্যা দূর হয়।
- লিউকোরিয়ার সমস্যা দূর হয়।
- অ্যানিমিয়া রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়।
- পেটের পীড়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
- ত্বকের যেকোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ইত্যাদি।
প্রতিদিন খেজুর খেলে যেসব রোগ থেকে মুক্তি মিলবে
প্রতিদিন খেজুর খেলে যে সব রোগ থেকে মুক্তি মিলবে তা জানানো হলো। খেজুরে আছে ভিটামিন, ফসফরাস,পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এসব উপাদান থাকার জন্য খেজুর খেলে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া রোগ দূর হয়। প্রতিদিন খেজুর খেলে অন্ত্রের গোলযোগ দূর হয়, কৃমি নাশ হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা দূর হয়,যকৃতের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে, ডায়রিয়া ভালো হয়, গলা ব্যথা সারে, সর্দি জ্বর ঠান্ডায় ভালো উপকার হয়।
কি উপায়ে খেজুর খেলে শরীরের শক্তি ও এনার্জি বজায় থাকবে
যে উপায় খেজুর খেলে শরীরের শক্তি এনার্জি বজায় থাকবে এখন তা আলোচনা করছি। যেহেতু খেজুর একটি শুকনো ফল এবং এটি শক্ত তাই খেজুর সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে সেই খেজুর সহ পানি খেলে শরীরে শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে, হজমের ব্যাঘাত হয় না এবং ইনস্ট্যান্ট এনার্জি পাওয়া যায়। তাই এই উপায়ে খেজুর খেলে শরীরের শক্তি ও এনার্জি বজায় থাকবে।
খেজুর খেলে কি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ে
খেজুর খেলে কি রক্তে এর মাত্রা বাড়ে অনেকের মনে এই প্রশ্ন থাকে। খেজুরে যেহেতু আয়রন, ক্যালসিয়াম,জিংক,ফসফরাস এবং ভিটামিন ও মিনারেল সহ আরো অনেক উপকারী উপাদান রয়েছে। তাই খেজুর খেলে শরীরে রক্ত উৎপন্ন হয়। এ কারণে খেজুর খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ে। তাই ডাক্তাররা রক্তস্বল্পতায় ভুক্তভোগী রোগীদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ানোর জন্য খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
খেজুর পানিতে ভিজিয়ে খেলে কি হয়
খেজুর পানিতে ভিজিয়ে খেলে কি হয় তা এখন বলবো। পানিতে ভিজিয়ে রাখা খেজুরে গ্লাইসেমিক সূচক (জিআই) কমে যায়। এর ফলে রক্তে শর্করার নিঃসরণ ধীরগতি সম্পন্ন হয়ে যায়। খেজুর পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যায় না। এটি রক্তে শর্করা মাত্রা স্মৃতিশীল রাখতে সহায়তা করে। স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। এভাবে খেজুর খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
খেজুর কাদের খাওয়া উচিত নয়
খেজুর কাদের খাওয়া উচিত নয় তা আমরা জানবো এবার। যারা ডায়াবেটিস রোগী এবং কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা এবং যাদের এল্যার্জি আছে তারা খেজুর খাওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করবেন। খেজুরে প্রাকৃতিক চিনি বেশি থাকে। তাই বেশি পরিমাণে খেলে রক্তে শর্করা মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এটি খাওয়া উচিত ।
আবার কিডনির সমস্যা হলে পরিমিত মাত্রায় পটাশিয়াম গ্রহণ করতে হয়।খেজুরে অতিমাত্রার পটাশিয়াম রয়েছে তাই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে কিডনি রোগীদের খেজুর খাওয়া উচিত। শুকনা খেজুরে প্রায়ই সালফেট উপাদান বিদ্যমান থাকে যা কিছু লোকের জন্য এলার্জির কারণ হতে পারে তাই তাদের খেজুর খাওয়া উচিত নয়।
কোন খেজুর খাওয়া উচিত নয়
কোন খেজুর খাওয়া উচিত নয় তা আমাদের ভালোভাবে জেনে নেয়া উচিত। সব রকমের খেজুর খেলেই উপকার পাওয়া যায় তবে যেগুলো কৃত্রিম খেজুর অর্থাৎ খেজুর ফলের মত দেখতে এবং তা সংরক্ষণ করে খেজুর হিসেবে বাজারে বিক্রি করা হয়ে থাকে। এগুলো খাওয়া ক্ষতিকর। জুজুবি নামে এক রকমের লাল ফল আছে,যার বীজ দেখতে একদম খেজুরের বীজের মত। এই ফলকে শুকিয়ে ও প্রসেসিং করে ড্রাই ফ্র ুট হিসেবে খেজুর বলে বাজারজাত করা হয়।
এটি খেলে মানুষের বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, যেমন বমি বমি ভাব, পেট ব্যথা,ডায়রিয়া সহ বিভিন্ন সমস্যা। এই কৃত্রিম খেজুর খাওয়া মোটেও উচিত নয়। তাই খেজুর কেনার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং আসল খেজুর খেয়ে খেজুরের উপকারিতা লাভ করা উচিত।
বেশি খেজুর খেলে কি ক্ষতি হয়
বেশি খেজুর খেলে কি ক্ষতি হয় আসুন জেনে নিই। খেজুর হলো ফাইবার সমৃদ্ধ ফল। এটি বেশি পরিমাণে খেলে পেট ফাঁপা অথবা এসিডিটি এবং ডায়রিয়া সহ বদ হজমের সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে যারা উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে অভ্যস্ত নন তাদের ক্ষেত্রে এসব সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও যারা ডায়াবেটিস রোগী তারা বেশি খেজুর খেলে ডায়াবেটিসের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। বেশি খেজুর খেলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় কারণ খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে।
লেখকের মন্তব্যঃ প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এই আর্টিকেলে লিখা হয়েছে। খেজুর স্বাস্থ্যকর খাবার এতে উচ্চমাত্রার ফাইবার রয়েছে যা হজমে সাহায্য করে শরীর ভালো রাখে বিভিন্ন রকম পুষ্টিকরণ রয়েছে যা শরীরের জন্য খুব উপকারী। খেজুরের উপকারিতা জেনে মানুষ যেন উপকৃত হতে পারে এ কারণে এটি লেখা হয়েছে।
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি কিন্তু অপকারিতা তেমন একটা দেখা যায় না। খেজুর সার্বজনীন ভাবে স্বীকৃত একটি উপকারী ফল। কিছু নির্দিষ্ট সমস্যা যেমনঃ ডায়াবেটিস বা কিডনি রোগ এবং এলার্জির সমস্যার কারণে অনেকে খেজুর খেতে ভয় পান। তারাও ডাক্তারদের পরামর্শ মেনে সঠিক উপায়ে খেজুর খেতে পারেন এবং এর পুষ্টিগুণ পেয়ে উপকৃত হতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url