রমজান মাস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

রমজান মাস হল সিয়াম সাধনের মাস। এ মাসে কোরআন নাযিল হয়েছে । মানবজাতির জন্য এ মাসে আল্লাহতায়ালা পথ প্রদর্শন করেছেন।  রমজান মাসের গুরুত্ব,ফজিলত,করণীয় আমল,বর্জনীয় আমল ইত্যাদি নিয়ে আর্টিকেলটি লিখা হয়েছে। তাই রমজান মাস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।  
রমজান মাস
রমজান মাসের ৩০ দিন রোজা পালনের বিধান রয়েছে। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নিজে রোজার প্রতিদান দিবেন। রোজা রাখলে অশেষ সওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়। রমজান মাস মুমিনদের জন্য খুব  গুরুত্বপূর্ণ। রমজান মাস তাদের জন্য বেশি বেশি সওয়াব হাসিলের মাস।আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার প্রচেষ্টার মাস। 

সূচিপত্রঃরমজান মাস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

  • রমজান মাস
  • রমজান মাসের উৎপত্তি
  • রমজান মাসের বৈশিষ্ট্য
  • রমজান মাস কেন পালন করা হয়
  • রমজান মাসের গুরুত্ব
  • রমজান মাসের ফজিলত
  • রমজান মাসে করণীয় আমল
  • রমজান মাসের বর্জনীয় আমল
  • রমজান মাসের শুভেচ্ছা জানানোর পদ্ধতি
  • লেখকের শেষ কথাঃরমজান মাস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

রমজান মাস

রমজান মাস অতি পবিত্র মাস। এ মাসে আল্লাহতালা কোরআন নাজিল করেন। মুসলমানরা বিশ্বাস করেন যে,পবিত্র কোরআন সকল মানুষের জন্য পথ নির্দেশনার ঘোষণা এবং মুক্তির একমাত্র উপায় হিসেবে বেহেশত হতে অবতীর্ণ হয়েছিল। এই মাসে মুসলিমরা ভোর হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা পালন করে থাকেন নেকি লাভের আশায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।

এছাড়াও এ মাসে মসজিদে ইতেকাফ করার মাধ্যমে মুসল্লিরা অশেষ সওয়াব লাভ করার সুযোগ পায়। রাসূল (সাঃ) এর উপর ওহী নাযিলের পর এবং তার জীবদ্দশা থেকেই প্রত্যেক সুস্থ মানুষের জন্য রোজাকে ফরজ করা হয়েছে।  

রমজান মাসের উৎপত্তি

হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময় ৬১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে রমজান মাসের উৎপত্তি শুরু হয়। তিনি যখন প্রথম আল্লাহতালার কাছ থেকে এই রমজান মাসে ওহি প্রাপ্ত হন তখন থেকেই এর আবির্ভাব হয়। আল্লাহর ফেরেস্তা জিব্রাইল আলাইহিস সাঃ যখন মক্কা নগরীতে নবী হযরত  মোহাম্মদ সাঃ এর কাছে আবির্ভূত হয়ে আল্লাহর প্রচার করেন,তখন থেকেই এ রমজান মাস পালন করা হয়।

রমজান মাসের বৈশিষ্ট্য

রমজান মাসের বৈশিষ্ট্য গুলো এখানে তুলে ধরা হলো। রমজান মাস অধিক সওয়াব অর্জনের মাস। এ মাস গুনাহ মাফের মাস। এ মাস জাহান্নাম থেকে নাজাতের মাস।অধিক মুনাফা অর্জন করার মাস এটি। এ মাসে জাহান্নামের দরজা গুলি বন্ধ করে দেয়া হয় এবং জান্নাতের দরজা গুলি খুলে দেয়া হয়।এমাসের প্রতিরাতে আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য জাহান্নামীকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দান করেন। 

ব্যবসায়ীদের যেমন ব্যবসা করার একটি মৌসুম থাকে সে সময়ে তারা অনেক লাভ করে থাকে,যেমনঃ ঈদের সময় তারা  ব্যবসার দ্বারা বেশি মুনাফা পায়। ঠিক তেমনি মুমিনদের জন্য এই মাস অধিক মুনাফা অর্জনের মাস,এ সময় বেশি বেশি সওয়াব লাভ করার উদ্দেশ্যে তারা বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগি করার সুযোগ পায়।

রমজান হলো আত্মশুদ্ধির মাস যেখানে আত্মশুদ্ধি ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট লাভ করা যায়। এ মাস হল মুসলিমদের আত্মার এবং শরীরের পুনর্জন্মের মাস। সিয়াম পালনের মাধ্যমে বান্দা পাপ মুক্ত হয়ে শিশুর মত নিষ্পাপ হয়ে যায়। এ মাস আমাদেরকে শেখায় ধৈর্য ও সংযম এবং কৃতজ্ঞতা। 

কোন ব্যক্তি রমজান মাসে সঠিক নিয়মে সিয়াম পালন করলে সে আল্লাহর রহমত অর্জন করে এবং জাহান্নাম থেকে নাজাত পায়। হাদিসে উল্লেখ আছে যে, যদি আল্লাহর বান্দারা  রমজানের পুরা মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানতে পারতো তবে তারা দোয়া করতো যেনো পুরো বছর জুড়েই  রমজান থাকে। 

রমজান মাস কেন পালন করা হয়

রমজান মাস কেন পালন করা হয় এ সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়া হলো। রমজান মাস মুসলমানদের জন্য অতি পবিত্র একটি মাস। মুসলিমদের জন্য এটি একটি বর্ধিত ইবাদত বন্দেগী করার সময়।  ধর্মীয় প্রতিফলন ঘটানোর এবং দানশীলতার ও সৎকর্মের সময় হল এই রমজান মাস।

এ মাসে প্রতিটি মুসলিম চায় বেশি বেশি সওয়াব হাসিল করতে। এই  মাসে সমাজের সকল মুসলিম কে মসজিদে একত্রিত হয়ে ইফতার করতে এবং নামাজ পড়তে ও ধর্মীয় ইবাদত বন্দেগী করতে দেখা যায় । এতে তাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। 

রমজান মাসের গুরুত্ব

রমজান মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। মুসলমানদের জন্য এই মাস আল্লাহর অশেষ রহমত ও বরকত স্বরূপ এবং নাজাতের মাস। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার সঠিক সময় এই  মাস।  এই মাসে বেশি বেশি  মাগফিরাত কামনা করার মাধ্যমে নেকি হাসিল করে জান্নাতের পথ সুগম করার মাস। তাই মুসলমানদের কাছে এই মাসের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য অপরিসীম। 

রমজান মাসের ফজিলত

রমজান মাসের ফজিলত অনেক। এ মাসের গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত হচ্ছে প্রত্যেক নফলের সওয়াব এক ফরজের সমান। আর প্রতিটি ফরজের সওয়াব সত্তর ফরজের সমান করে দেয়া হয়। রমজানের ত্রিশ দিন তিন দশকে বিভক্ত করা হয়।  প্রথম দশক হল রহমতের,পরের দশক হল মাগফিরাতের এবং শেষ দশক হল নাজাতের।

তাই এ মাসে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করা, রহমতের জন্য দোয়া করা এবং জাহান্নাম থেকে নাজাত পাওয়ার জন্য দোয়া করতে হয়। শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে শবে কদরের মতো মাহাত্ম্যপূর্ণ রাতের তালাশ  করতে হয়। এ রাতে মহিমান্বিত কোরআন নাজিল হয়েছিল।
রমজান মাস
রমজান মাসের এ রাত্রে অর্থাৎ শবে কদরের রাতে প্রত্যেক মুমিন বান্দারা অশেষ সওয়াব হাসিলের নিয়তে সারা রাত্রি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকেন। শবে কদর হল হাজার বছরের চাইতেও উত্তম একটি রাত। এটি হল মুমিন বান্দাদের নেকি হাসিলের রাত। 

রমজান মাসে করণীয় আমল

রমজান মাসে করণীয় আমল গুলো সম্পর্কে আর্টিকেলের বর্ণনা করা হয়েছে। যেহেতু মুমিনদের জন্য নেকি অর্জনের বিশেষ সুযোগের মাস এটি,তাই এ মাসে করণীয় আমলগুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া জরুরী। সঠিক নিয়মে রমজানের রোজাগুলো পালন করলে রোজাকারীর রোজার প্রতিদান আল্লাহতায়ালা নিজে দিবেন। রোজা রাখলে অশেষ সওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়।  
রমজান মাসে করনীয় আমল গুলো সম্পর্কে নিচে দেয়া হলোঃ
  • সিয়াম পালন করা। 
  • সময়মতো নামাজ আদায় করা। 
  • সহিহ ভাবে কোরআন শেখা। 
  • অন্যকে কোরআন তেলাওয়াত শেখানো। 
  • সময় মতো সেহরি খাওয়া। 
  • তারাবির নামাজ আদায় করা। 
  • বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা। 
  • বেশি বেশি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। 
  • কল্যাণকর কাজে বেশি বেশি অংশগ্রহণ করা। 
  • নিয়মিতভাবে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা। 
  • অধিক পরিমাণে সাদকাহ করা। 
  • সৎ চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা। 
  • ফরজে কেফায়া আদায় বা ইতেকাফ করা। 
  • দ্বীন প্রচারের স্বার্থে দাওয়াতের কাজে অংশগ্রহণ করা। 
  • সামর্থ্য থাকলে ওমরা পালন করা। 
  • রমজানের শেষ দশকে বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করা। 
  • বেশি বেশি দোয়া করা এবং আল্লাহর রহমত প্রার্থনা করা। 
  • সময় মতো নিজে ইফতার করা। 
  • রোজাদারদের ইফতার করানো।
  • বেশি বেশি তাওবা ও ইস্তেগফার পাঠ করা। 
  • তাকওয়া অর্জন করা। 
  • ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করা। 
  • ফিতরা আদায় করা। 
  • অপর মুসলিমকে খাদ্য খাওয়ানো/সেহেরী খাওয়ানো। 
  • আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা।
  • কোরআন মুখস্থ করা। 
  • বেশি বেশি জিকির-আজগার করা। 
  • মিসওয়াক করা। 
  • কুরআন তিলাওয়াত শুনানো। 
  • কুরআনের অর্থ ভালোভাবে বুঝা ও আমল করা।

রমজান মাসের বর্জনীয় আমল

রমজান মাসের বর্জনীয় আমলগুলো সম্পর্কে জেনে নিয়ে আমাদেরকে সাবধানতার সাথে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করে চলা উচিত। রমজান মাসের বর্জনীয় আমল বলতে বুজায়,যে সমস্ত কাজগুলো করা যাবে না অর্থাৎ রমজান মাসের পবিত্রতা ক্ষুন্ন হতে পারে এমন কাজগুলো থেকে বিরত থাকা।

রমজান মাসের বর্জনীয় আমল গুলো সম্পর্কে নিজে জানানো হলোঃ
রমজান মাসে রোজা রাখার নিয়মের মধ্যে প্রথমটি হল সেহেরী গ্রহণ করা। অনেকে সেহরি না করেই রোজা রাখা পছন্দ করেন। কিন্তু সেহেরীকে বাদ দেয়ার যাবে না। সেহরি খাওয়া বরকত পূর্ণ। এটি বাদ দেয়া সুন্নতের খেলাফ। সেহেরী খাওয়ার সময় অতিরিক্ত পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করার যাবে না এতে এসিডিটি হতে পারে আবার সেহরি বাদ দিলে ক্ষুধা বৃদ্ধি পাবে এবং শরীরের ক্লান্তি নেমে আসবে। তাই পরিমিত মাত্রায় সেহরি খেতে হবে। 

অনেক সময় রোজাদারেরা সূর্য ডুবে যাওয়ার পরও ইফতার করতে দেরি করে,আযান দিলেও তাড়াতাড়ি ইফতার করতে চায় না। এমন করলে সুন্নতের তরফ হয়ে যায় রোজার তরক হয়ে যায়। ইফতারে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া যাবে না কারণ এতে পেটে গ্যাস হতে পারে অথবা  ডায়রিয়া বা বদহজম  হতে পারে তাই এমন অভ্যাস বর্জন করা উচিত।

রমজান মাসে অনেক সময় দেখা যায় যে,  ইফতারের আইটেম হিসেবে অনেকেই প্রচুর খাবার তৈরি করেন। যা তারা নিজেরাও খেতে পারেন না এবং সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারেন না আবার অন্যকে বিতরণও করে না, এতে খাবার নষ্ট হয়। এভাবে অতিরিক্ত খাবার তৈরি করে নষ্ট করা বা অপচয় করার ঠিক নয়। অহেতুক কথাবার্তা বলা বা বাহ্যিক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে হবে। রমজানের পবিত্রতা নষ্ট হতে পারে এমন কোনো কাজ করা যাবে না। 

রমজান মাসের শুভেচ্ছা জানানোর পদ্ধতি

রমজান মাসের শুভেচ্ছা জানানোর পদ্ধতি রয়েছে। রমজানের শুভেচ্ছা জানাতে যে দুইটি সম্ভাষণ ব্যবহৃত হয় তাহলে রমজানুল কারীম এবং রমজানুল মোবারক। এই দুইটি হল রমজান মাসে সবচেয়ে
বেশিব্যবহৃত অভিব্যক্তি স্বরূপ অভিবাদন। এগুলোর অর্থ হল বরকতময় রমজান বা উদারতার রমজান।
পবিত্র মাহে রমজানের অভিনন্দন জানাতে রমজান,আহলান সাহলান মারহাবা জানানো হয়। 

লেখকের শেষ কথাঃরমজান মাস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

রমজান মাস প্রত্যেক মুমিনের অনেক সাধনার মাস।  সাবান মাসের শেষ হতে না হতেই রমজানের আগমন ঘটে। মুমিন বান্দা সারা বছর ধরে এ মাসের অপেক্ষা করতে থাকে সওয়াব হাসিলের আশায়।  এ মাসে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি  করে নিজের জীবনকে আরো সুন্দরভাবে সাজাতে চায়,আল্লাহর রহমত পেতে চায়। প্রত্যেক ঈমানদারগণ আল্লাহর বরকতের মাঝে থাকতে চায়, জাহান্নাম থেকে  নাজাতের জন্য দোয়া করতে থাকে আল্লাহর কাছে । শবে কদরের রাত তালাশ করার মাধ্যমে আরো বেশি বেশি নেকি কামাই এর সুযোগ পাওয়া যায় এই রমজান মাসে। আমরা সবাই যেন রমজান মাসের গুরুত্ব, মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য বুঝে এবং আমল করে আল্লাহ তায়ালার কাছে নেকি হাসিলের মাধ্যমে  ঈমানদার বান্দা হতে পারি।পরকালে জান্নাত লাভের সুযোগ পাই, আল্লাহ আমাদের কবুল করুন, আমীন। 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url