শিশুর বিকাশে পারিবারিক সম্পর্কের গুরুত্ব
শিশুর বিকাশে পারিবারিক সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। একটি শিশুর তার পরিবারের সাথে যে পারিবারিক বন্ধন রয়েছে তাকে পারিবারিক সম্পর্ক বলে। পারিবারিক সম্পর্ক একটি শিশুর জীবনের প্রথম ভিত্তি এবংঅনেক গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হিসেবে বিবেচিত।
শিশুর বিকাশের মূল ভিত্তি হলো আদর্শ পরিবার। জন্ম থেকে শুরু করে একটি শিশুর শৈশব ,কৈশোর ও বয়সন্ধিকাল থেকে যৌবন পর্যন্ত তার শারীরিক,মানসিক,সামাজিক,আবেগিক এবং জ্ঞানীয় বিকাশে পারিবারিক সম্পর্কের প্রভাব থাকে।
পেজ সূচিপত্রঃ শিশুর বিকাশে পারিবারিক সম্পর্কের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
- শিশুর বিকাশে পারিবারিক সম্পর্কের গুরুত্ব
- শিশুর বিকাশ এর প্রকারভেদ
- শিশুর শারীরিক বিকাশ
- শিশুর মানসিক বিকাশ
- শিশুর সামাজিক বিকাশ
- শিশুর আবেগিক বিকাশ
- শিশুর জ্ঞানীয় বিকাশ
- শিশুর বিকাশে পিতা মাতার সম্পৃক্ততা
- শিশু সৃজনশীলতা বাড়ানোর উপায়
- শিশুর বিকাশ ও সুস্থতার জন্য পিতা-মাতার কৌশল
- লেখকের মন্তব্যঃ শিশুর বিকাশে পারিবারিক সম্পর্কের গুরুত্ব
শিশুর বিকাশে পারিবারিক সম্পর্কের গুরুত্ব
শিশুর বিকাশে পারিবারিক সম্পর্কের গুরুত্ব অনেকাংশে নির্ভরশীল। শিশুর বিকাশ একটি বহুমাত্রিক প্রক্রিয়া যা জন্মের পর থেকে শুরু হয়। একটি শিশুর পরিপূর্ণভাবে শারীরিক বিকাশ,মানসিক বিকাশ,সামাজিক বিকাশ,আবেগিক বিকাশ, জ্ঞানীয় বিকাশ ঘটলে তাকে শিশুর বিকাশ বলে। এসব কিছুর বিকাশ ঘটলে তাকে শিশুর বিকাশ বলা হয়। একটি শিশুর বিকাশে পারিবারিক সম্পর্কের গুরুত্ব কতটা অর্থবহ তা আলোচনা করা হলো।
শিশু বিকাশের প্রতি পিতা-মাতার মনোভাব হল একটি শিশুর আচরণের উপর সবচাইতে বেশি সামাজিকভাবে প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান। একটি শিশু কিভাবে কোন কোন পরিস্থিতিকে কিভাবে মোকাবিলা করবে এবং তার কর্মের ফলাফল কে প্রভাবিত করবে তা নির্ভর করে পিতা-মাতার মনোভাবের উপর। শিশু তার পিতা-মাতার মধ্যে সুসম্পর্ক দেখলে এবং তাদের মনোভাব ভালো দেখলে নিজেকে নিরাপদ ভাবে।আর নিরাপদ মনে করলেই তার সার্বজনীন বিকাশ পরিপূর্ণতা লাভ করে।
শিশুর চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে পিতা-মাতা ও পরিবেশ উভয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রেম প্রীতি স্নেহ মমতা সহানুভূতি প্রভৃতি মানব হৃদয়ে স্বাভাবিক গুন এই সব গুণাবলীর সম্মুখ বিকাশ লাভ হচ্ছে চরিত্র গঠন জীবনে আদর্শের প্রতি নিষ্ঠার ও প্রবল অনুরাগে চরিত্র গঠনের প্রথম ও প্রধান সোপান পারিবারিক সুশিক্ষা, সৎসংসর্গ, আদর্শবান শিক্ষক এবং গুরুজনের উপদেশ এই সোপানকে প্রশস্ত করে।
শৈশবে মানব সন্তান অন্যকে নকল করতে চায়। যে বা যারা তার সবচেয়ে কাছের মানুষ শিশু তাকে অনুসরণ করতে চায়। পরিবারে পিতা-মাতা, বড় ভাই- বোন তার সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়। এক্ষেত্রে এরাই শিশুর উপর গভীর প্রভাব রাখে। তাই পিতা-মাতা, ভাই-বোন বা পরিবারের অন্যান্য আপনজনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য শিশুকে গড়ে তুলতে সাহায্য করে থাকে।
অন্যদিকে সামাজিক পরিবেশও শিশুর চরিত্র গঠনে অপরিসীম প্রভাব রাখে। ভালো পরিবেশ পেলে শিশুর বিকাশ ভালোভাবে হয়। চরিত্র বলতে আসলে মানবিক সমন্বিত রূপকে বোঝায়। মানুষের অন্তর্নিহিত বৃত্তিসমূহের বিকাশই হচ্ছে চরিত্র। চরিত্র মানব মনের অনেক গভীর স্তরের ব্যাপার, আর তা গড়ে ওঠে তার জীবনের প্রথম পর্বে। এজন্য শিশুকাল থেকেই চরিত্র গঠনের প্রতি মনোযোগী হওয়া দরকার। এতে শিশুর মানবীয় বিকাশের পরিপূর্ণতা পায়। শিশুর বিকাশে পারিবারিক সম্পর্কের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পেরেছেন নিশ্চয়ই।
শিশুর বিকাশ এর প্রকারভেদ
শিশুর বিকাশের প্রকারভেদ সম্পর্কেও জানতে হবে। একটি শিশুর বিকাশ পরিপূর্ণভাবে তার শারীরিক বিকাশ,মানসিক বিকাশ,সামাজিক বিকাশ,আবেগীক বিকাশ এবং জ্ঞানীয় বিকাশ এর প্রসারণকে বুঝায়।
শিশুর বিকাশ এই ছোট শব্দটির মাঝে শিশুর পরিপূর্ণভাবে বিকাশের কথা বুঝানো হয়েছে ।
শিশুর বিকাশ এর প্রকারভেদ গুলো আলোচনা করা হয়েছে এই আর্টিকেলে। নিচে শিশুর বিকাশের প্রকারভেদ সমূহ বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। শিশুর বিকাশ এর প্রকারভেদের মধ্যে রয়েছে শিশুর শারীরিক বিকাশ, মানসিক বিকাশ ,সামাজিক বিকাশ ,আবেগিক বিকাশ এবং জ্ঞানীয় বিকাশ।
শিশুর শারীরিক বিকাশ
একটি আদর্শ পরিবারের শিশুর শারীরিক বিকাশ সঠিকভাবে হয়। শিশুর শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়। একটি শিশুর কি কি শারীরিক বিকাশ হয় তা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসঃএকটি পরিবার শিশুকে সঠিক সময়ে সঠিক খাবারগুলো খেতে উৎসাহিত করে থাকে।
- পর্যাপ্ত ঘুমঃএকটি পরিবার শিশুর পর্যাপ্ত ঘুমের ব্যবস্থা করে থাকে।পর্যাপ্ত ঘুম একটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
- নিরাপত্তাঃ একটি পরিবার শিশুকে নিরাপদে রাখে এবং বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে থাকে।
- রোগ-প্রতিরোধঃ একটি পরিবার শিশুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকে এবং প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে।
শিশুর মানসিক বিকাশ
একটি শিশুর মানসিক বিকাশে একটি আদর্শ পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।শিশুর চিন্তাভাবনা ও বুদ্ধির বিকাশ ঘটে।
একটা শিশুর মানসিক বিকাশগুলো সম্পর্কে নিচে বর্ণনা করা হলোঃ
- ভালোবাসা ও স্নেহঃ একটি পরিবার শিশুর প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও স্নেহ প্রদান করে থাকে, যা শিশুর মানসিক বিকাশের সহায়ক।
- আত্মবিশ্বাসঃ একটি পরিবার শিশুর ছোট ছোট সাফল্য কেউ স্বীকৃতি দিয়ে থাকে, যা শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
- মানসিক স্বাস্থ্যঃ একটি পরিবার শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে থাকে। শিশুর মানসিক চাপ কমাতে এবং সমস্যা সমাধানের সহায়তা করে থাকে।
শিশুর সামাজিক বিকাশ
সামাজিক বিকাশ ঘটাতে পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
একটি শিশু সামাজিক বিকাশ গুলো সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলোঃ
- সামাজিক প্রজ্ঞাঃ একটি পরিবার শিশুকে সমাজের নিয়ম কানুন ও রীতিনীতি সম্পর্কে শিক্ষা দিয়ে থাকে যা শিশুর সামাজিক প্রজ্ঞা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। যোগাযোগ দক্ষতাঃ একটি পরিবার শিশুকে অন্যদের সাথে সঠিকভাবে কথা বলতে ও মিশতে শেখায়।যা একটি শিশুর যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করে থাকে।
- সহযোগিতা ও সহমর্মিতাঃ একটি পরিবার শিশুকে অন্যদের সাথে সহযোগিতা করতে শেখায়।অন্যের কষ্টে সহমর্মিতা প্রকাশ করতে শেখায়।
- সামাজিক সম্পর্কঃ একটি পরিবার শিশুকে সুস্থ সামাজিক সম্পর্ক গঠন করতে সহায়তা করে থাকে।
শিশুর আবেগিক বিকাশ
একটি শিশুর আবেগিক বিকাশ ঘটাতে পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম। নিচে আবেগিক বিকাশ গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
- আবেগ নিয়ন্ত্রণঃ একটি পরিবার শিশুকে তার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখিয়ে থাকে।দুঃখ কষ্টের মত আবেগগুলোকে কিভাবে প্রকাশ করতে হয় তা ভালোভাবে শিখিয়ে থাকে।
- সংবেদনশীলতাঃ একটি পরিবার শিশুকে অন্যের আবেগ বুঝতে শেখায় এবং সম্মান করতে শেখায়। যা শিশুর আবেগিক বুদ্ধিমত্তাকে উন্নত করতে সহায়তা করে।
- মানসিক স্থিতিশীলতাঃ একটি পরিবার শিশুর মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে থাকে।কঠিন সময়ে মানসিক সহায়তা প্রদান করে থাকে।
শিশুর জ্ঞানীয় বিকাশ
একটি পরিবার শিশুর পরিপূর্ণভাবে জ্ঞানীয় বিকাশ ঘটায়। একটি শিশুর জ্ঞানের বিকাশ গুলো কি কি তা আলোচিত হলোঃ
- শিক্ষাঃ একটি পরিবার শিশু শিক্ষা কে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। শিশুকে পড়াশোনা করতে সাহায্য করে থাকে যা শিশুর জ্ঞানীয় বিকাশের সাহায্য করে থাকে।
- কৌতূহলঃ একটি পরিবার শিশুর কৌতূহলকে উৎসাহিত করে থাকে। শিশুকে নতুন জিনিস শিখতে সহযোগিতা করে থাকে।
- ভাষা বিকাশঃ একটি পরিবার শিশুর সাথে কথা বলতে থাকে। তাকে কথা বলা শেখায় এবং তার ভাষা বিকাশে সাহায্য করে থাকে।
- সমস্যার সমাধানঃ একটি পরিবার শিশুকে যে কোন সমস্যার সমাধানে উৎসাহিত করে।সব সমস্যার সমাধান সাহসিকতার সাথে নিতে উৎসাহিত করে।এতে তাদের চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটে থাকে।
শিশুর বিকাশে পিতা মাতার সম্পৃক্ততা
শিশুর বিকাশে পিতা-মাতার সম্পৃক্ততা রয়েছে। কোন শিশু যদি অভিভাবকের অবহেলার কারণে পথহারা হয়ে যায় অর্থাৎ বিপথগামী হয় তাহলে সে পরকালে আল্লাহর কাছে সে অভিভাবকের বিরুদ্ধে ফরিয়াদ করবে হে আমাদের রব আমরা আমাদের অভিভাবকদের এবং বড়দের অনুসরণ করেছি তারা আমাদের বিপথগামী করেছে। সূরা আহযাব; আয়াত নাম্বারঃ৬৭-৬৮
শিশুর নৈতিক শিক্ষার সব ব্যবস্থা করতে হবে যাতে তারা দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম হয়। শিশুকে শিষ্টাচার শেখাতে হবে যাতে তার ব্যবহার সুন্দর হয়। সমাজের সবার ভালোবাসা ও সহানুভূতি লাভ করে এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে তাকে সামাজিকতা শেখাতে হবে। এক্ষেত্রে শিশুর পিতা মাতার মধ্যে ভালো সম্পর্ক থাকতে হবে এবং শিশুর সাথেও পিতা-মাতার ভালো আচরণ করতে হবে।
শিশুর সৃজনশীলতা বাড়ানোর উপায়
শিশুর সৃজনশীলতা বাড়ানোর উপায় গুলো অবলম্বন করতে হবে। প্রতিটি শিশুই সৃজনশীল এবং তাদের সৃজনশীলতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে যেতে হবে,যাতে তারা সফলকাম হতে পারে।
শিশুর সৃজনশীলতা বাড়ানোর উপায় গুলো হলোঃ
- শিশুর জন্য সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
- শিশুর আত্ম অনুসন্ধিৎসু মনের পরিচর্যা করতে হবে।
- শিশুর জন্য মুক্ত খেলার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
- শিশুর সখকে উৎসাহিত করা উচিত।
- শিশুকে সাহসী করে গড়ে তুলতে হবে।
- শিশুকে হার মেনে নেয়া এবং ভুল করা মেনে নিতে শেখানো উচিত। তবে একই ভুল যেন বারবার না করে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- তাদেরকে ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত করতে হবে।
শিশুর বিকাশ ও সুস্থতার জন্য পিতা-মাতার কৌশল
শিশুর বিকাশ ও সুস্থতার জন্য পিতা-মাতার কৌশল অবলম্বন করতে হবে। শিশুর বিকাশ ও সুস্থতার জন্য পারিবারিক এবং সামাজিক পরিবেশ সমুন্নত রাখতে হবে। শিশুকে আত্ম পরিচর্যা করতে শেখাতে হবে যেন সে নিজেই নিজের যত্ন নিয়ে নিজেকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে পারে। তাদের খেলাধুলা করার সুযোগ দিতে হবে।
বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে শিশুদের অংশগ্রহণ করাতে হবে যেমনঃ মসজিদে নামাজ পড়তে নিয়ে যেতে হবে, ঈদগাহে ঈদের নামাজ পড়তে নিয়ে যেতে হবে, বিয়ে-শাদির অনুষ্ঠানে তাদেরকে নিয়ে অংশগ্রহণ করতে হবে। শিশুকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে হবে।
লেখক এর শেষ মন্তব্যঃশিশুর বিকাশে পারিবারিক সম্পর্কের গুরুত্ব
শিশুর বিকাশে পারিবারিক সম্পর্কের গুরুত্ব খুবই অর্থবহ। একটি শিশুর বিকাশে পরিবার, সমাজ এবং পরিবেশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।প্রতিটি শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশের জন্য তার খাদ্য শিক্ষা খেলাধুলা এবং ভালোবাসা পূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন।
একটি শিশুর জীবনে পারিবারিক সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশে পরিবারের ভূমিকা অপরিহার্য তাই প্রতিটি পরিবারের উচিত শিশুর প্রতি যত্নবান হওয়া এবং তাদের শারীরিক মানসিক সামাজিক আবেগিক ও জ্ঞানী ও বিকাশের সহায়তা প্রদান করা।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url