গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। অনেকে মনে করেন গর্ভাবস্থায় বিট রুট খাওয়া নিরাপদ কিনা। বিটরুটের উপকারিতা অনেক। বিটরুট গর্ভবতী মা এবং গর্ভস্থ শিশুর প্রচুর স্বাস্থ্য উপকরিতা প্রদান করে থাকে।

গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

এই আর্টিকেলে গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার নিয়ম,খাওয়ার পরিমাণ,কখন খেতে হয়, খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, সতর্কতা,অপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। 

পেজ সূচিপত্রঃগর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন 

গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার আশ্চর্যজনক অনেক উপকারিতা রয়েছে। গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা গুলো সম্পর্কে এই আর্টিকেল উল্লেখ করা হলোঃ

এটি অ্যানিমিয়া ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করে। এতে আছে আয়রন যা গর্ভাবস্থায় লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে সিলিকা এবং ক্যালসিয়াম যা হাড়ের অস্ট্রিওপরোসিস রোধ করতে এবং হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে থাকে।

গর্ভাবস্থায় বিটরুট বিভিন্ন সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে থাকে। এটি পটাশিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এটি রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রদাহ রোধ করে।

রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বিটরুট খেলে জয়েন্ট পেইন দূর হয়। গর্ভবতী মা এবং তার অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি ও বিকাশকে উন্নীত করতে সাহায্য করে। এটি মেরুদন্ডকে সুদৃঢ় করতে সাহায্য করে। বিটে উপস্থিত বিটা সায়ানিন আপনার যকৃত ও রক্তকে বিষমুক্ত করে।

রক্তে উপস্থিত ফ্যাটি আসিড ও বিষাক্ত পদার্থকে দূর করে স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করে। বিটরুটে থাকা ভিটামিন সি উপাদানটি আয়রন শোষণে সহায়তা করে একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা এবং প্রসবের পথ প্রশস্ত করতে সহায়তা করে থাকে। বিটরুট জন্মগত ত্রুটি হ্রাস করে এবং এতে থাকা ফলিক অ্যাসিড স্বাস্থ্যকর কলার বৃদ্ধি এবং গর্ভস্থ শিশুর ভ্রূণের বিকাশ নিশ্চিত করে।

গর্ভস্থ শিশুর পিঠের মেরুদন্ডের সর্বোত্তম বিকাশ সুনিশ্চিত করার দ্বারা জন্মগত ত্রুটিগুলো প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। গর্ভাবস্থায় বিটরুট পরিমিত মাত্রায় গ্রহণের ফলে গর্ভবতী মা,গর্ভস্থ সন্তান ভিটামিন সমৃদ্ধ থাকে এবং ক্রমবর্ধনশীল ভ্রূণকে প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে থাকে।

গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

নিউরাল টিউবের ত্রুটি প্রতিরোধ করে থাকে। যেহেতু বিটে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড থাকে তাই এটি স্নায়বিক ত্রুটি ও বিকাশ জনিত সমস্যাগুলির ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দিতে সহায়তা করে। এভাবে বিট ভ্রুনের সঠিক বিকাশ ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে।

গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার নিয়ম

গর্ভাবস্থায় সুষম পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত। এটি গর্ভবতী মা এবং গর্ভস্থ শিশুর প্রয়োজনীয় ভিটামিন খনিজ পদার্থ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেতে সহায়তা করে থাকে। যেহেতু বিটরুট পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ তাই সকালের নাস্তা বা দুপুরের খাবারের সময় এটি খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। 

সকালে গর্ভবতী মহিলা বিটরুটের জুস পান করতে পারেন। আবার দুপুরে খাবারের সাথে বিট এবং অন্যান্য তাজা ফল ও শাকসবজির সঙ্গে সালাদ হিসেবে বা সবজি হিসেবে রান্না করে খেতে পারেন। গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন একটি বা দুইটি বিট খাওয়া উচিত।

বিটরুট বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় যেমনঃবিটরুট জুস,বিটরুট সালাদ,বিটরুট পিকেল বা আচার,বিটরুট স্যুপ,বিটরুট পাউডার, বিটরুট ডিপ বা হুমাস,বিটরুট কারি,বিটরুট পাস্তা সস,বিটরুট স্মুদি ইত্যাদি।

কখন বিটরুট খাওয়া যাবে না

যাদের রক্তচাপ খুবই কম অথবা বর্তমানে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খাচ্ছেন তাদের খাদ্য তালিকায় বিটরুট যোগ করার আগে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নেয়া উচিত। এতে উচ্চ মাত্রার অক্সলেট থাকে। তাই এই অবস্থায় কিডনিতে পাথর সৃষ্টির সম্ভাবনাকে বৃদ্ধি করতে পারে। তাই এ সমস্ত সমস্যা থাকলে তখন বিটরুট খাওয়া যাবে না।

বিটরুট কাদের খাওয়া ঠিক নয়

বিটরুট খাওয়া স্বাস্থ্যকর হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি খাওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বিশেষ করে যারা নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে আছেন তাদের জন্য বিটরুট খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অবশ্যই জরুরি।

বিটরুট কাদের খাওয়া ঠিক নয় তা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

  • যে সমস্ত মানুষের এলার্জির সমস্যা রয়েছে অর্থাৎ বিটরুট খেলে শরীরে এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়, শরীরে চুলকানির লক্ষণ দেখা দেয়,ত্বক ফুলে উঠে,র‍্যাশ দেখা দেয় তাদের এটি খাওয়া মোটেও ঠিক নয়।
  • বিটরুটে অক্সলেটের মাত্রা বেশি পরিমাণে থাকায় এটি কিডনিতে ক্যালসিয়াম স্টোন বা পাথর তৈরির ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে। যাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা আছে বা কিডনির কোন সমস্যা রয়েছে তাদের বিটরুট খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • বিটরুট রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। যারা হাইব্লাড প্রেসারের রোগী তাদের জন্য বিটরুট খুবই উপকারী। তবে যারা লো প্রেসারে ভুগছেন বা যাদের রক্তচাপ কম অর্থাৎ হাইপটেনশন রোগী তাদের জন্য এটি বিপদজনক হতে পারে। কারণ এটি রক্তচাপ কমিয়ে মানুষকে মৃত্যু ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।তাই এ ধরনের রোগীদের বিটরুট খেতে সতর্ক হতে হবে।
  • বিটরুটে প্রাকৃতিক চিনি বেশি পরিমাণে রয়েছে। যা রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। তাই বিটরুট গ্রহণের ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের এটি খেতে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

প্রতিদিন কতটুকু বিটরুট খাওয়া উচিত

প্রতিদিন আধা কাপের বেশি বিটরুট খাওয়া উচিত নয়। অথবা প্রতিদিন হাফ কাপ বিটরুট জুস অথবা এক থেকে দুইটি বিটরুট খাওয়া যাবে। কারণ বিটরুটে অক্সলেট এসিড থাকায় বেশি পরিমাণে খেলে এটি ইউরিক এসিডের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। এর ফলে অতিরিক্ত গাউটের ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে। 

বিটরুট বেশি গ্রহণ করা কিডনির জন্য ক্ষতিকর। বিটরুটে অক্সালেট নামে একটি উপাদান বিদ্যমান। এটি কিডনিতে পাথর সৃষ্টির জন্য দায়ী। গর্ভবতী মহিলাদের কিডনির সমস্যা থাকলে অথবা যে কোন ইনফেকশন সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা বিটরুট খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। কারণ তাদের ক্ষেত্রে এটি কিডনির জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।

বিটরুট জুসের উপকারিতা

বিটরুট জুসের উপকারিতা অনেক। এই জুস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এটি হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে,লিভার এবং ফুসফুস ভালো রাখে,রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে,রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে,রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে, রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে,বাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে, মেদ কমিয়ে ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করে, হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে,মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে,কারসিনোজেনের বিরুদ্ধে কাজ করে, শরীর ও ত্বক ভালো রাখে।

বিটরুট পাউডারের উপকারিতা

বিটরুট রূপান্তরিত মূল জাতীয় সবজি। বিটরুটকে রোদে শুকিয়ে গুড়ো করে বিটরুট পাউডার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বর্তমানে বাজারে এর চাহিদা অনেক বেশি। বিটে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকে। এটি এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় মানুষের বিভিন্ন রোগব্যাধি ও সমস্যার সমাধান হিসেবে এটি কাজ করে থাকে। 

বিটরুট পাউডারের উপকারিতা সম্পর্কে নিচে দেয়া হলঃ

  • বিটরুট পাউডার পুষ্টি সমৃদ্ধ সুপার ফুডঃবিটরুট পাউডার পুষ্টি সমৃদ্ধ সুপার ফুড হিসেবে কাজ করে এতে অতিমাত্রায় বিটালাইন রয়েছে। এটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ তাই এটি দেখতে গাঢ় লাল রঙের হয়ে থাকে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের বিভিন্ন কোষ ও অন্যান্য অর্গানগুলিকে ফ্রি রেডিক্যাল দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা প্রদান করে থাকে।
  • হার্টের স্বাস্থ্য ও লিভারের সুরক্ষায় বিটরুট পাউডারঃ বিটরুট পাউডার হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। লিভারের সাপোর্ট দেয় অর্থাৎ লিভার কে সুরক্ষিত রাখে,মেদ কমিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে স্মৃতিভ্রম হওয়া থেকে বাঁচায় এবং স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করে। ফলে হৃদপিণ্ড ভালো থাকে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে এবং সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে।
  • বিটরুট পাউডার নাইট্রেট সমৃদ্ধঃবিটরুট পাউডার নাইট্রেট সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে নাইট্রেট শরীরের শোষিত হয়ে নাইট্রিক অক্সাইডে পরিবর্তিত হয় যার রক্তনালী গুলিকে শিথিল করতে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। 
  • কিডনি সুরক্ষায় বিটরুট পাউডারঃকিডনি সুরক্ষায় বিটরুট পাউডার ভালো কাজ করে। এটি সুষমভাবে গ্রহণের ফলে কিডনির নানান রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • বিটরুট পাউডার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধঃবিটরুট পাউডার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি দেখতে গাঢ় লাল বর্ণের হয়ে থাকে।এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিভিন্ন রোগ সংক্রমণ রোধ করে এবং প্রদাহরোধী বৈশিষ্ট্য পালন করে থাকে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে কোষ কে ভালো রাখে এবং শরীরের অন্যান্য অর্গানগুলিকে ভালো রাখে এটি ফ্রি রেডিকেল দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে থাকে।
  • ত্বকের সুরক্ষায় বিটরুট পাউডারঃবিটরুট পাউডার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এতে থাকা প্রোটিন, ভিটামিন সি এবং কোলাজেন তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের সুরক্ষা নিশ্চিত করে থাকে।
  • বিটরুট পাউডার আয়রন সমৃদ্ধঃবিটরুট পাউডার আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং রক্তশূন্যতার প্রতিরোধ করে। ফলে অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
  • বিটরুট পাউডার ক্যান্সার প্রতিরোধকঃবিটরুট পাউডার ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এতে থাকা বিটালাইন,ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে। এটি ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং কোলন ক্যান্সার থেকে মুক্তি দেয়।
  • বিটরুট পাউডারের অন্যান্য উপকারিতাঃবিটরুট পাউডার গ্রহণ করলে স্থূলতায় ব্যক্তির শরীরের ওজন কমে। সংক্রমণ  জনিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে এতে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরের ক্লান্তি দূর করে। এটি স্বাস্থ্যকর গর্ভবস্থা নিশ্চিত করে এবং ভ্রুনের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখে।

বিটরুট খেলে কি গ্যাস হয়

বিটরুট শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি মূল জাতীয় সবজি। বিটরুট পাচনতন্ত্রের জন্য খুবই ভালো কাজ করে থাকে এবং হজমে সহায়ক। যাদের বেশি মাত্রায় আন্ত্রিক গোলযোগের সমস্যা রয়েছে অর্থাৎ খাবার হজমে অসুবিধা হয় তাদের বেশি পরিমাণে বিটরুট  খাওয়া মোটেও ঠিক নয়। তাহলে পেটে গ্যাস বা অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

গর্ভবতী মহিলাদের বিটরুট খাওয়া কি ঝুঁকিপূর্ণ

গর্ভবতী মহিলাদের পরিমিত মাত্রায় বিটরুট খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ নয়। গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ১-২ টি ছোট বিটরুট খাওয়া বা হাফ কাপ বিটরুট রস পান করা সাধারণত নিরাপদ বলে মনে করা হয়।

অতিরিক্ত বিট রোড রস এবং এর ফলে বিটুরিয়া বা লাল প্রস্রাবের সমস্যা হতে পারে যা বেশ উদ্বেগ জনক হিসেবে দেখা দেয়। বেশি পরিমাণে বিটরুট খাওয়ার ফলে মল-মূত্র লাল রংয়ের হতে পারে। বিটরুটে বিটায়ানিন নামক উপাদান থাকে যা যকৃতের বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে সহায়তা করে এবং গর্ভাবস্থায় দেহের সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অতিরিক্ত পরিমাণে বিটরুট গ্রহণের ফলে অ্যানাফিলাক্সিস রোগ হতে পারে। এর ফলে শরীরে তীব্র এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়। এলার্জির কারণে ত্বকে লাল র‍্যাশ দেখা দেয়,চুলকানি হয়,ত্বক ফুলে যায়, হাঁপানীর সমস্যা,আমবাত,গলা শক্ত হয়ে যাওয়া এবং ব্রঙ্কোস্পাজম হতে পারে। তাই যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের গর্ভাবস্থায় বিটরুট খেতে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। 

বিটরুট খাওয়ার অপকারিতা

বিটরুট খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ভালো। কিন্তু তারপরও সেগুলি খাওয়ার সময় আপনার কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। পরিমিত পরিমাণে এবং সঠিকভাবে এটি না খেলে শরীরের বিভিন্ন রকম অপ্রত্যাশিত সমস্যা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই উপকারিতার পাশাপাশি  অপকারিতা গুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া জরুরী।

বিটরুট খাওয়ার অপকারিতাগুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত জানানো হলোঃ

বিটরুট খাওয়ার ফলে বিটুরিয়া হতে পারে। এটি এমন একটি ক্ষতিকারক অবস্থা যেখানে বেশি পরিমাণে বিটরুট খাওয়ার ফলে প্রশ্রাব এবং মল গোলাপি বা লাল রঙের হয়ে থাকে। এটি উদ্ভিদের প্রাকৃতিক রঞ্জক গুলির কারণে ঘটে থাকে এবং বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। অনেক সময় ডায়রিয়া,পেট ব্যথা বা পেট ফাঁপা অথবা অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে। তাই পরিমিত মাত্রায় বিটরুট খাওয়া উচিত।

কিডনিতে পাথরের সিম্টম যাদের রয়েছে এমন ব্যক্তিদের বিট খাওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ এতে থাকে উচ্চ অক্সালেট উপাদান যা সংবেদনশীল ব্যক্তিদের কে কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করে সমস্যায় ফেলতে পারে। তাই এ সমস্ত ব্যক্তিদের বিট গ্রহণের আগে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

বিটরুটে রয়েছে ফারমেন্টেবল অলিগো-স্যাকারাইডস,মনো-স্যাকারাইডস,ডি-স্যাকারাইডস এবং  পলিউলস উপাদান। এগুলো মানুষের হজমের সমস্যা ঘটাতে সক্ষম। যাদের পরিপাকতন্ত্র সংবেদনশীল অর্থাৎ ইরিটেবল বাওয়েল সিস্টেম (আই বি এস) প্রবলেম আছে তাদের বিট খাওয়ার পর পেট ফোলা ভাব, গ্যাস বা পেট ব্যথা,ডায়রিয়া হতে পারে।

বিটে রয়েছে উচ্চ নাইট্রেট উপাদান যা মেথেমোগ্লোবিনেমিয়া রোগ সৃষ্টি করে। এটি এমন একটি অবস্থা যা রক্তের অক্সিজেন বহন ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই গর্ভবতী মহিলা এবং নাইট্রেট সংবেদনশীল রোগীদের বিট খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া উচিত।

বিটরুটের একটি মধ্যম গ্লাইসেমিক সূচক রয়েছে, যা খাওয়ার পরে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস মিলিটাস প্রবলেম আছে বা যারা তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা কম বেশি হওয়ার কারণে অসুবিধায় পড়তে পারে তাদের এটি খাওয়া উচিত নয়।

বিটের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে থাকে যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। যদি কেউ রক্ত পাতলা করার ওষুধ সেবন করে থাকেন তবে তার বিট খাওয়ার আগে অবশ্যই অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে। যদি এমন অবস্থা হয় বা এলার্জির সমস্যা দেখা দেয় তবে এটি না খাওয়া  ভালো।

বিটরুটের পুষ্টিগুণের পরিমাণ

বিটরুটের পুষ্টিগুণের পরিমাণ সম্পর্কে জেনে নেয়া জরুরি। বিটরুট অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। বিটরুটে রয়েছে নাইট্রেট,এনটি অক্সিডেন্ত,ফোলেট,সিলিকা, বিটা সায়ানিন,আয়রন,ভিটামিন ইত্যাদি। প্রতি ১০০ গ্রাম বিটরুটে কি কি পুষ্টিগুণ কতো পরিমাণে রয়েছে তা নিচে দেয়া হলোঃ 

ক্রমিক নাম্বারপুষ্টিগুণের নামপুষ্টিগুণের পরিমাণ
০১আয়রন০.৮ মিলি.
০২ক্যালসিয়াম১৬ মিলি.
০৩ম্যাগনেসিয়াম২৩ মিলি.
০৪ফসফরাস ৪০ মিলি.
০৫পটাশিয়াম ৩২৫ মিলি.
০৬জিংক ০.৩৫ মিলি.
০৭ভিটামিন সি৪.৯ মিলি.
০৮ভিটামিন বি৯১০৯ মাইক্রোগ্রাম
০৯প্রোটিন ১.৬ গ্রাম
১০কার্বোহাইড্রেট ৯.৬ গ্রাম
১১ফ্যাট
০.২ গ্রাম
১২চিনি৬.৮ গ্রাম
১৩ক্যালরি৪৩ ক্যালরি
১৪ফাইবার  ২.৮ গ্রাম

লেখকের শেষ মন্তব্যঃগর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা   

গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শরীরের যত্ন নেওয়া খুবই জরুরী। কারণ এই সময়ে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পরস্পরের উপর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই সময়ে শরীরে প্রচুর পুষ্টির প্রয়োজন হয় এবং এটি শুধু খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে পুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব হতে পারে। গর্ভাবস্থায় পরিমিত ভাবে বিটরুট গ্রহণের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত পুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

বহুল আলোচিত প্রশ্নাবলীঃ

গর্ভাবস্থায় কোন কোন সবজি খাওয়া উচিত নয়?

গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকরা শাকসবজি ও ফলমূল বেশি করে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু কিছু সবজি আছে যেগুলো গর্ভাবস্থায় হজম করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। এই সবজিগুলো হলোঃ ব্রকলি এবং বাঁধাকপি। এগুলো শরীরের পক্ষে হজম করা খুব কঠিন হতে পারে। এগুলো খেলে বদহজম,অ্যাসিডিটি  এবং শরীরে ফোলা ভাব সৃষ্টি হতে পারে যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অস্বস্তিকর হয়। তাই গর্ভাবস্থায় এ দুটি সবজি খেতে সতর্ক হওয়া উচিত।

গর্ভাবস্থায় কিউই ফলের উপকারিতা কি?

কিউই ফলে রয়েছে পটাশিয়াম। এটি সোডিয়ামের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। এটি প্রি-এক্লেমশিয়ার মত সমস্যা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে থাকে। গর্ভাবস্থায় সঠিক পরিমাণ কিউই ফল খেলে গর্ভবতী মায়ের হৃদপিণ্ড এবং ধমনীর বিভিন্ন রোগ থেকে নিরাময় পাওয়া সম্ভব হতে পারে। 

গর্ভাবস্থায় কোন ফল খাওয়া নিরাপদ নয়?

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নিষিদ্ধ ফলের মধ্যে একটি হলো কাঁচা পেঁপে। কারণ এতে প্যাপেইন এবং ল্যাটেক্স  নামে দুটি উপাদান থাকে। প্যাপেইন প্রসব বেদনার সৃষ্টি করে বলে প্রাথমিকভাবে ধরা হয়। তাই গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে কাঁচা পেঁপে বেশি খেলে অকালে গর্ভপাত হয়ে বাচ্চার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই অকাল গর্ভপাতের হাত থেকে বাঁচতে হলে গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেপে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। 




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url