মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তির উপায়-মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার ১০টি কার্যকর উপায়

মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তির উপায় মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার ১০টি কার্যকর উপায় সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে শুধুমাত্র দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা গুরুত্বপূর্ণ এমনটি ভাববেন না। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আরো অনেক বিষয় খেয়াল রাখতে হয়।

মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তির উপায়

মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য যেমন-পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা জরুরি ঠিক তেমনি হেলদি লাইফ স্টাইলও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখে। আর্টিকেলটিতে এই সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।তাই এ বিষয়গুলো সম্পর্কে  জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।

পেজ সূচিপত্রঃমানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তির উপায়-মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার ১০টি কার্যকর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তির উপায়

মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানা জরুরি। আধুনিক জীবনের দ্রুতগতি এবং জটিল পরিস্থিতিতে মানসিক অস্থিরতা ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণ। প্রতিদিনের চাপ অনিশ্চয়তা এবং প্রত্যাশার ভিড়ে আমাদের মন যখন ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে,তখন মানসিক অস্থিরতা আমাদের গ্রাস  করতে শুরু করে। এই অস্থিরতা শুধু আমাদের মানুষের প্রশান্তি কেড়ে নেয় তা নয় বরং আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্য কর্মক্ষমতা এবং সম্পর্কের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কিন্তু হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ  এবং অভ্যাসের মাধ্যমে মানুষের অস্থিরতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব এবং একটি শান্ত ও স্থিতিশীল জীবনযাপন করা যায়।   

এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি সম্পর্কে জানানো হলোঃ মননশীলতা ও ধ্যান, নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, পর্যাপ্ত ঘুম, চাপ মোকাবেলার কৌশল,সামাজিক সমর্থন ও সম্পর্ক, শখের প্রতি মনোযোগ, প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটানো, ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করা,সময় ব্যবস্থাপনা,লক্ষ্য নির্ধারণ করা,অন্যের সাহায্য চাওয়া,সহানুভূতিশীল হওয়া ও ক্ষমা করতে শেখা,নতুন কিছু শেখা এবং ডিজিটাল ডিটক্স বা ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরে থাকা ইত্যাদি। এই আর্টিকেলে আমরা মানসিক অস্থিরতা কি এর কারণ এবং তা থেকে মুক্তি বিভিন্ন কার্যকর উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। 

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার ১০টি কার্যকর উপায়

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার দশটি কার্যকর উপায় সম্পর্কে এখানে আমরা আলোচনা করব। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব অপরিসীম একটি সুস্থ মন আমাদের জীবনকে আরো সুন্দর এবং  সুখী  হিসেবে গড়ে তোলে। কিন্তু আধুনিক জীবনের বহু চাপ, প্রতিযোগিতা এবং অস্থিরতার কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের আবনতি হয়। তবে কিছু সহজ ও কার্যকর উপায় অবলম্বন করে আমরা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত ও স্থিতিশীল করতে পারি। নিচে মানুষের স্বাস্থ্য ভালো রাখার দশটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ

  1. পর্যাপ্ত ঘুমঃ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টার ঘুম আমাদের মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেয় এবং পুনরায় সক্রিয় হতে সাহায্য করে। ঘুমের অভাব হলে মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটে,মেজাজ খারাপ হয় এবং মানসিক অস্থিরতা বাড়ে। ভালো ঘুমের জন্য জরুরী হলো একটি নির্দিষ্ট ঘুমের রুটিন তৈরি করা,ঘুমানোর আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার না করা এবং আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশ তৈরি করা।
  2. সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করাঃআমাদের নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস সরাসরি আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং মানসিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। ফল,সবজি,শস্য এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ সুষম খাবার গ্রহণ করলে তা মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সাহায্য করে। প্রক্রিয়াজাত খাবার চিনি এবং অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ করলে মানসিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। এছাড়াও সুস্থ থাকতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। 
  3. নিয়মিতভাবে ব্যায়াম করাঃশারীরিক কার্যকলাপ আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর অনেক ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ব্যায়ামের সময় আমাদের মস্তিষ্ক থেকে এন্ডোরফিন হরমোন নিঃসৃত হয়,যা আমাদের মনকে প্রফুল্ল রাখে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত ২০-৩০ মিনিট হাঁটা,দৌড়ানো,সাঁতার কাটা,ইয়োগা,সাইকেলিং ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখা যায়।
  4. মননশীলতা ও ধ্যান অনুশীলন করাঃ মননশীলতা হল বর্তমান মুহুর্তে মনোযোগ দেওয়া এবং কোন রকম বিচার ছাড়াই নিজের চিন্তাশক্তি ও অনুভূতি সম্পর্কে সচেতন থাকা। ধ্যান অনুশীলন করা হলো মনকে   প্রশান্ত ও ধীর-স্থির করার একটা প্রক্রিয়া। নিয়মিতভাবে মননশীলতা ও ধ্যান অনুশীলন করার মাধ্যমে আমরা আমাদের চিন্তাভাবনার গতিকে কমাতে এবং মানসিক শান্তিকে বাড়াতে পারি। প্রতিদিন কিছুক্ষণ ধ্যান অনুশীলন মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সাহায্য করে। 
  5. সামাজিক সমর্থন ও সম্পর্ক বজায় রাখাঃ বন্ধুবান্ধব পরিবার-পরিজন এবং প্রিয়জনদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সাথে নিজের চিন্তা ও অনুভূতি ভাগ করে নেওয়া এবং তাদের সমর্থন পাওয়া মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা এবং অন্যদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা একাকীত্ব ভাব দূর করে এবং মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।  
  6. চাপ মোকাবিলা করার কৌশল শেখাঃ জীবনের চাপ এড়ানো অসম্ভব হলেও আমরা সেটা মোকাবেলা করার কৌশল শিখতে পারি,যেমন সময় ব্যবস্থাপনা নির্ধারণ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে "না" বলার অভ্যাস তৈরি করা এবং কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়া হল কিছু কার্যকর কৌশল। এছাড়াও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা ডিপ ব্রিথিং এক্সারসাইজ এবং পেশি শিথিলকরণ কৌশল তাৎক্ষণিক চাপ কমাতে সহায়তা করে থাকে।           
  7. শখের প্রতি মনোযোগ দেওয়াঃ নিজের পছন্দের কাজ বা শখের প্রতি মনোযোগ দেওয়া মনকে আনন্দিত করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। গান শোনা বই পড়া বাগান করা ছবি আঁকা বা অন্য কোন সৃজনশীল কাজ মানুষের কাজ থেকে ভালো রাখতে সহায়তা করে। 
  8. ইতিবাচক চিন্তাভাবনার অভ্যাস করাঃ ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনার অভ্যাস তৈরি করলে এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার অভ্যাস থাকলে তা মনকে প্রশান্ত রাখে। নিজের ভালো দিকগুলোর দিকে মনোযোগ দেওয়া এবং সমস্যাগুলোকে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করা মানসিক শান্তির জন্য অত্যন্ত জরুরি।
  9. প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটানোঃ প্রকৃতির শান্ত ও স্নিগ্ধ পরিবেশ আমাদের মনকে প্রশান্ত করে। নিয়মিত পার্কে হাটা সবুজ গাছপালা দেখা বা প্রাকৃতিক পরিবেশের সময় কাটানো মানুষের চাপ কমাতে এবং মনকে সতেজ রাখতে সহায়তা করে থাকে। 
  10. প্রয়োজনে সাহায্য চাওয়াঃ মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলা করা কঠিন হতে পারে এবং কখনো কখনো পেশাদার সাহায্য নেওয়া অপরিহার্য হয়ে ওঠে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা মনোবিজ্ঞানী পরামর্শ ও চিকিৎসা মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে অত্যন্ত সাহায্য করে। নিজের আবেগ অনুভূতি বুঝতে এবং সুস্থ থাকার জন্য সঠিক দিক নির্দেশনা পেতে পেশাদারদের সাহায্য নেওয়া অনেক বুদ্ধিমানের কাজ। মানুষের স্বাস্থ্য আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এর যত্ন নেয়া আমাদের সকলের কর্তব্য। 

এছাড়াও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার আরো কয়েকটি উপায় রয়েছে যেমনঃসময় ব্যবস্থাপনা,লক্ষ্য নির্ধারণ করা,সহানুভূতিশীল হওয়া ও ক্ষমা করতে শেখা,নতুন কিছু শেখা এবং ডিজিটাল ডিটক্স বা ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরে থাকা ইত্যাদি। ছোট ছোট পরিবর্তনও দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই নিজের যত্ন নিন এবং একটি সুস্থ মনের অধিকারী হোন। এই দশটি কার্যকর উপায় অবলম্বন করে আমরা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে আরো ভালো রাখতে পারি এবং একটি সুখী ও সমৃদ্ধ জীবন যাপন করতে পারি।

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার খাবার

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার খাবার খেলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার খাবার এর মধ্যে রয়েছে-দই,আখরোট,টমেটো,ডার্ক চকলেট,স্যামন মাছ ইত্যাদি। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার খাবারগুলো হলো বাদাম,সবুজ শাকসবজি, ভিটামিন সি জাতীয় ফল বা সাইট্রাস ফল যেমনঃ লেবু, কমলা লেবু,মাল্টা,শস্যদানা,আমলকি,চেরিফল,আপেল,বেদানা,কলা,ডিম ইত্যাদি। ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি,ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেলে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এই সমস্ত খাবার গুলো খাওয়ার পাশাপাশি মনে রাখতে হবে ভিটামিন ডি এর উৎস সূর্যালোকে সকাল সাতটা থেকে দুপুর তিনটার মধ্যে যে কোন সময় কমপক্ষে ১৫ মিনিট রোদে থাকতে হবে। কারণ ভিটামিন ডি এর অভাব হলে মানুষের হাড় ক্ষয় রোগ হয় এবং মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বিপর্যয় ঘটে তাই ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণের লক্ষ্যে সূর্যালোকে যাওয়া উচিত।

মানসিক অস্থিরতার কারণ

মানসিক অস্থিরতার কারণ একাধিক হতে পারে। এদের মধ্যে কিছু প্রধান কারণ নিচে দেওয়া হলঃ

  • মানসিক চাপঃআমাদের দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের চাপ পরিলক্ষিত হয়,যেমনঃকাজের চাপ,আর্থিক সমস্যা,সম্পর্কের টানা-পোড়া,পরীক্ষার চাপ অথবা কোন অপ্রত্যাশিত ঘটনা যা মানসিক অস্থিরতা অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী চাপ শরীরের হরমোন এবং স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে এবং মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়।
  • উদ্বেগ ও ভয়ঃ অতিরিক্ত উদ্বেগ,অমূলক ভয় এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করলে মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। সামাজিক উদ্বেগ, প্যানিক অ্যাটাক এবং জেনারেলাইজড  অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার এর মত সমস্যা গুলি মানসিক অস্থিরতার প্রধান কারণ হতে পারে।  
  • অবসাদঃ দীর্ঘস্থায়ী দুঃখবোধ আগ্রহের অভাব ক্লান্তি এবং হতাশা অবসাদের লক্ষণ হতে পারে। অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন। কারণ তাদের মন কোন কিছুতেই স্থির হতে পারে না এবং নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করে রাখে। 
  • পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবঃপর্যাপ্ত ঘুমের অভাব মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়,মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটায় এবং মানসিক অস্থিরতা বৃদ্ধি করে। পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের মানসিক ও শারীরিক  স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস মানে ল্যাক অফ স্লিপ বা ঘুমের ব্যাধি যা মানসিক অস্থিরতার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। 
  • অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপনঃ অসাধ্য কর জীবন যাপন বা অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস শারীরিক কার্যকলাপের অভাব ধূমপান মদ্যপান এবং মাদকদ্রব্যের ব্যবহার মানুষের স্বাস্থ্যের উপর কুপ্রভাব ফেলে। এই অভ্যাস গুলি মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে দেয় এবং মানসিক অস্থিরতা বৃদ্ধি করে। 
  • শারীরিক অসুস্থতাঃ কিছু কিছু শারীরিক অসুস্থতা যেমন-থাইরয়েড সমস্যা,হৃদরোগ বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা মানসিক অস্থিরতা তৈরি করে থাকে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে শরীরে হরমোনের পরিবর্তন এবং অস্বস্তির সৃষ্টি হয় যা মানুষের শান্তির ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
  • আঘাত মূলক অভিজ্ঞতাঃ শৈশবের কোন আঘাত মূলক ঘটনা,দুর্ঘটনা বা প্রিয়জনের মৃত্যু দীর্ঘমেয়াদী মানসিক অস্থিরতার কারণ হতে পারে। পোস্ট ট্রোমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার বা পিটিএসডি একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ যেখানে আঘাত মূলক অভিজ্ঞতার কারণে কোন ব্যক্তি তীব্র মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন।
  • পরিবেশগত কারণঃপরিবেশগত কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে দূষিত পরিবেশ,অতিরিক্ত নয়েজ  পলিউশন,অস্বাস্থ্যকর বাসস্থান এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ইত্যাদি। এগুলো মানসিক অস্থিরতা বৃদ্ধি করতে পারে। 
  • বংশগত বা জেনেটিক প্রবণতাঃবংশগত বা জেনেটিক প্রবণতা কিছু ক্ষেত্রে মানসিক অস্থিরতার কারণ হতে পারে। জীনগত কারণে কেউ কেউ অন্যদের তুলনায় মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য বেশি সংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারে।
  • সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপঃ সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে দারিদ্রতা বেকারত্ব সামাজিক বৈষম্য এবং প্রতিযোগিতামূলক জীবন যাপন এগুলো মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। আর্থিক অনিশ্চয়তা এবং সামাজিক সমর্থন সিস্টেম গুলোর অভাব মানসিক শান্তির জন্য ক্ষতিকর হিসেবে দেখা যায়। 

মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার লক্ষণ

মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার লক্ষণ গুলো জানা দরকার। কারণ দীর্ঘস্থায়ী এবং তীব্র মানসিক অস্থিরতা যা দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করছে। এগুলো থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে এর লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জানতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার লক্ষণ গুলো হলো-

  • অতিরিক্ত উদ্যোগ ভয় বা আতংক স্থান নিয়ন্ত্রণ করে খুবই কঠিন।
  • ঘুমের চরম অভাব বা অতিরিক্ত ঘুম।
  • খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন অর্থাৎ অতিরিক্ত খাওয়া বা একেবারে না খাওয়া।
  • সামাজিক কার্যকলাপ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া।
  • কোন কাজে মনোযোগ দিতে অসুবিধা হওয়া।
  • নেতিবাচক মনোভাব বা আত্মঘাতী চিন্তা ভাবনা করা।
  • মেজাজের আকস্মিক  পরিবর্তন হওয়া।
  • দৈনন্দিন কাজকর্মে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা। 

কখন মানসিক অস্থিরতা বেড়ে যায়

মানুষের মনের ইচ্ছা শক্তির বিরুদ্ধে খারাপ কোন কিছু যখন ঘটে তখনই মূলত মানুষের মানসিক অস্থিরতা বেড়ে যায়। প্রতিটি মানুষের জীবনে কিছু না কিছু দুঃখ কষ্ট বা মানসিক অস্থিরতার সমস্যা দেখা যায়। 

মানসিক অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণের উপায়

মানসিক অস্থিরতা একটি সাধারন সমস্যা হলেও এর প্রভাব আমাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। তবে সচেতনতা,সঠিক পদক্ষেপ এবং নিয়মিত অভ্যাসের মাধ্যমে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়। একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন,মননশীলতা অনুশীলন,সামাজিক সমর্থন এবং প্রয়োজনে সাহায্য গ্রহণ মানসিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং ভুলগুলো ক্ষমা করে দেওয়ার মানসিকতা থাকলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়। রাগ বিদ্বেষ এবং পুষে রাখলে মানসিক অস্থিরতা আরো বাড়ে। তাই সহানুভূতিশীল হওয়া ও ক্ষমা করার মাধ্যমে মানসিক অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। 

নতুন কিছু শেখা বা কোন নতুন দক্ষতা অর্জন করলে তা মনকে ব্যস্ত রাখতে সাহায্য করে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এটি মানসিক অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত মোবাইল ফোন কম্পিউটার এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার মানসিক অস্থিরতা বাড়াতে পারে তাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকতে হবে অর্থাৎ ডিজিটাল ডিটক্স এভোয়েড করতে হবে। সব সময় বাস্তব জগতের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করার মাধ্যমে নিজেকে ব্যস্ত রাখলে মানসিক শান্তি পাওয়া সম্ভব হয়। 

মনে রাখতে হবে মানসিক স্বাস্থ্য শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই গুরুত্বপূর্ণ এবং এর যত্ন নেওয়া আমাদের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য অংশ। তাই ধৈর্য ধরুন এবং নিজের প্রতি সদয় হোন। ধীরে ধীরে আপনি মানসিক অস্থিরতা কাটিয়ে একটি সুন্দর ও শান্ত জীবন ফিরে পাবেন ইনশাআল্লাহ।  

মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থা

মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানা অবশ্যই জরুরি। মানসিক অস্থিরতা যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন পেশাদার সাহায্য চাওয়া জরুরী হয়ে পড়ে। তখন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা মনোবিজ্ঞানী বা থেরাপিস্ট এর পরামর্শ ও চিকিৎসা মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তি পেতে অত্যন্ত সহায়ক হয়। বিভিন্ন ধরনের থেরাপি যেমন কগনিটি বিহাভিয়ারাল থেরাপি সি টিভি এবং টক থেরাপি (talk therapy) মানুষের সমস্যা সমাধানের কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।

মানসিক চাপ কমানোর ঔষুধ

মানসিক চাপ কমানোর জন্য অনেক সময় ডাক্তারদের পরামর্শে অনেক ওষুধের খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে হয়ে থাকে। এন্টিডিপ্রেসড ওষুধগুলো মূলত হতাশা এবং উদ্বেগ কমাতে ব্যবহৃত হয়। সেরোটোনিন হরমোন ক্ষরণ হলে মানুষের মন ভালো থাকে। তাই এ হরমোনের ক্ষরণের জন্য সেরোট্রালিন ওষুধ সেবনের পরামর্শ ডাক্তাররা দিয়ে থাকেন। এছাড়াও অতিরিক্ত উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা কমাতে ডাক্তাররা ডায়াজিপাম, লোরাজেপাম, এসটিটালোপ্রাম ইত্যাদি ঔষধ গুলো সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ সেবন করা ঠিক না এতে প্রাণহানের আশঙ্কা থাকে। হেলদি লাইফ লিড করার মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানোর উপায় বের করা অনেক ভালো। কারণ নিয়মিত ওষুধ সেবন করলে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং ওষুধের উপর নির্ভরশীলতা তৈরি হয়। তাই মানসিক চাপ কমানোর জন্য আমাদের নিয়মিতভাবে সুন্দর জীবন যাপন করার অভ্যাস করতে হবে।   

ওষুধ  ছাড়া মানুসিক চাপ কমানোর উপায় কি

ওষুধ ছাড়া মানুষের চাপ কমানোর উপায় সম্পর্কে জেনে নিন। দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় আনুষঙ্গিক কিছু নিয়ম কানুনের পরিবর্তন ও জীবনযাত্রার মান উন্নত করার মাধ্যমে ওষুধ ছাড়া মানসিক চাপ কমানো যায়। ওষুধ ছাড়া মানুষের চাপ কমানোর উপায় গুলো হলো-প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে ব্যায়াম করা,পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রয়োজন মাফিক সরব থাকা,পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা,আত্মীয়তার সুসম্পর্ক বজায় রাখা,ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা। 

মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তির দোয়া

মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তির দোয়া করতে হবে এবং বেশি বেশি দরুদ শরীফ পড়তে হবে। যত বেশি বেশি দরুদ শরীফ পড়বেন আপনার মানসিক অস্থিরতা তত বেশি কমতে থাকবে এবং আপনি মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারবেন।

বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করার মাধ্যমেও মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় যেমনঃ কোরআনে বলা হয়েছে,

উচ্চারণঃআলা বি জিকরিল্লাহি তাত্বমাইন্নুল কুলুব। অর্থঃআল্লাহর জিকিরের দ্বারাই একমাত্র হৃদয়ের প্রশান্তি মিলে।(সুরা-রদঃ২৮)       

মন্তব্যঃমানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তির উপায়-মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার ১০টি কার্যকর উপায়

মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তির উপায়-মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার ১০টি কার্যকর উপায় নিয়ে এই আর্টিকেলে আলোচনা করেছি। মানসিক অস্থিরতা হলো মনের এমন একটা অবস্থা যেখানে ব্যক্তি শান্ত এবং স্থির থাকতে পারে না।

এটি বিভিন্ন রূপে প্রকাশ করা যেতে পারে যেমন অতিরিক্ত চিন্তা করা, উদ্বিগ্ন  বোধ করা,মনোযোগের অভাব,খিটখিটে মেজাজ, ঘুমের সমস্যা,সিদ্ধান্ত গ্রহণে অসুবিধা এবং কোন কাজে স্থির থাকতে না পারা। মানসিক অস্থিরতা কোন নির্দিষ্ট রোগ নয়,বরং এটি একটি লক্ষণ যা বিভিন্ন মানুষের শারীরিক কারণে দেখা দিতে পারে। মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন কার্যকর উপায় রয়েছে এগুলো সঠিক সময়ে এবং সঠিক পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।   



 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url