পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ২০টি বাক্য-পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ইতিহাস

পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ২০টি বাক্য পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ইতিহাস নিয়ে আর্টিকেলটিতে লেখা হয়েছে। পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষের গুরুত্ব ,নববর্ষের প্রভাব,বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ কিভাবে উদযাপন করা হয়, বাংলা সনের ইতিহাস ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।

পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ইতিহাস

পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হবেন। তাই পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো।   

সূচিপত্রঃপহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ২০টি-বাক্য পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ২০টি বাক্য

পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ২০টি বাক্য দিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে এ সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হলো। যাতে আপনার বুঝতে সুবিধা হয় পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে। পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ২০টি বাক্য নিচে লেখা হলোঃ

  1. বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনকে পহেলা বৈশাখ বলা হয়। 
  2. সম্রাট আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা শুরু হয়।
  3. সম্রাট আকবরের সময়কাল থেকে পহেলা বৈশাখের দিন হালখাতা করা হতো।
  4. পহেলা বৈশাখের দিন গ্রামের মানুষ ভোরে ঘুম থেকে উঠে নতুন জামা পড়ে সাজগোজ করে।
  5. পহেলা বৈশাখের দিনে মানুষজন আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের বাড়িতে বেড়াতে যায়।
  6. এই দিনে বাড়িঘর পরিষ্কার করে সুন্দর ভাবে সাজানো হয় এবং বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।
  7. কয়েকটি গ্রামে সম্মিলিতভাবে খোলা মাঠে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয় এসব মেলাতে কুটির শিল্প সামগ্রী বিক্রয় বিপণন এর ব্যবস্থা থাকে নানা রকম পিঠাপুলির আয়োজন করা হয়
  8. পহেলা বৈশাখের দিন ইলিশ মাছ পান্তা দিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে।
  9. পহেলা বৈশাখের দিন গ্রামে বিভিন্ন রকম খেলার আয়োজন করা হয় এর মধ্যে নৌকা বাইচ লাঠি খেলা কিংবা কুস্তি লড়াইয়ের প্রচলন আছে।
  10. পহেলা বৈশাখের এই দিনটি জাতীয় উৎসব হিসেবে পালন করা হয়।
  11. পহেলা বৈশাখের এই দিনে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী লোকেরা সবাই একত্রিত হয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করে থাকে।
  12. পহেলা বৈশাখের এই দিনে সরকারিভাবে ছুটির ঘোষণা দেওয়া হয় এবং সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালত বন্ধ থাকে তাই সুন্দর ছুটির আমেজ পাওয়া যায়।
  13. পহেলা বৈশাখে মানুষের মনে নতুন আশার আলো জেগে ওঠে এবং নতুন সম্ভাবনার কথা ভাবে।
  14. এই দিনে অনেক গ্রামে লোকগান ও লোকনৃত্যের মাধ্যমে বাঙালির ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলা হয়।
  15. পহেলা বৈশাখে ছোট বাচ্চারা মেলায় গিয়ে নাগরদোলায় উঠে অনেক আনন্দের সময় কাটায়।
  16. এই দিন থেকে কৃষকেরা জমিতে ফসল ফলানোর জন্য চিন্তা ভাবনা শুরু করে।
  17. পহেলা বৈশাখ গ্রীষ্মকালের প্রথম দিন তাই এ সময় থেকেই আম খেয়ে মানুষ পরিতৃপ্ত হয়।
  18. এদিন অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সুন্দর আয়োজন করে থাকেন।
  19. এটি নতুন বছরের শুভ সূচনা এবং পুরনো বছরের বিদায়ের সময়।
  20. এই দিন বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রা পালন করা হয়।

পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ইতিহাস

পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ইতিহাস অত্যন্ত তথ্যবহুল ও গাম্ভীর্যপূর্ণ। এটি বাঙালি সংস্কৃতির মূলধারার সাথে যুক্ত। পহেলা বৈশাখ উদযাপন এখন আধুনিক রুপ পেলেও পূর্বে এর সূচনা হয়েছিল মূলত প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক প্রয়োজনের তাগিদে। পহেলা বৈশাখ উদযাপনের সূচনা মূলত মুঘল সম্রাট আকবরের সময় থেকে হয়েছিলো। মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হবার পর সম্রাটরা হিজরী পঞ্জিকা অনুযায়ী কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করতেন। কিন্তু হিজরী সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল তাই কৃষি ফলনের হিসাবের সাথে কোনোভাবেই মিলতো না।

এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করতে হতো। এই সমস্যার কারণে খাজনা সুষ্ঠুভাবে পরিশোধ করতে সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার আনার আদেশ দিয়েছিলেন। তারা দেশ অনুযায়ী রাজাকিও জ্যোতির্বিজ্ঞানী হতে উল্লাহ সিরাজী সৌরশন এবং আরবি হিজরী সন এর উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেছিলেন। 

১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ বা ৯৯২ হিজরীতে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে সম্রাট আকবরের সিংহাসনে আরোহণের সময় ১৫৫৬ সালের ৫ই নভেম্বর থেকে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয়। প্রথমে এরশনের নাম ছিল ফসলেশন এবং পরে তা বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়। তাই বলা যায় সম্রাট আকবরের সময়কাল থেকে পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়। 

পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষের গুরুত্ব

পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষের গুরুত্ব সম্পর্কে এবার আলোচনা করা যাক। পৃথিবীর সমস্ত জাতি ও সম্প্রদায়ের প্রায় সব ধরনের উৎসবেরই একটি সামাজিক দিক এবং তার প্রভাব আছে। বাংলাদেশে পালিত এই উৎসবেরও অনেক গুরুত্ব রয়েছে। এই উৎসবের সামাজিক দিক ও প্রভাবের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের মানুষের পারস্পরিক মেলামেশা ও জানাজানির সুযোগ সৃষ্টি হয়। এতে করে মানুষে মানুষে বিভেদ দূর হয় সহমর্মিতার সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং জাতীয় জীবনে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রভাব সৃষ্টি করে।

নিজ নিজ ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন থেকেও উৎসবের মাধ্যমে বৃহত্তর জাতীয় ঐতিহ্য সৃষ্টি হয়।  বাঙালি জাতির জীবনের সাথে পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ  নিবিড় ভাবে যুক্ত। সারা বাংলাদেশে নানা ধরনের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে হালখাতা তার মধ্যে সবচেয়ে পুরন অনুষ্ঠান নববর্ষ উপলক্ষে দেশের নানা স্থানে মেলা বসে স্থানীয় লোকেরা সাধারণত ইমেলের আয়োজন করে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উৎসব হচ্ছে ঢাকাতে বর্ষবরণ উৎসব। পুরো ঢাকাবাসী এ উৎসবের আমেজ পায়।

বিভিন্ন রাজনৈতিক বিরোধ সংঘাতে বিভক্ত এ জাতি অন্তত এই দিন উৎসব উপলক্ষে বিভেদ ভুলে গিয়ে কাছাকাছি আসতে পারে এবং খুশিতে মেতে উঠে। নববর্ষের উৎসবে শিশু থেকে শুরু করে প্রতিটি মানুষ আনন্দে মেতে উঠে। বিশেষ বিশেষ উৎসবে তারা বিশেষ বিশেষ পোশাক পরিধান করে, ঠিক তেমনি এই উৎসবেও সবাই নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী নতুন পোশাকে সজ্জিত হয়।

এই উৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশের নানা স্থানে যে মেলা বসে তাতে মানুষের ঢল নামে। আধুনিক সভ্যতার কারণে বাংলাদেশের মেলার সংখ্যা এখন কমে গেছে তবে এই ঐতিহ্য যেটুকু এখন অবশিষ্ট আছে তাতে মানুষের প্রাণ চঞ্চল্য যথেষ্ট পরিমাণে দেখা যায় আসলে উৎসব ছাড়া মানুষের জীবন চলে না। উন্নত দেশ কিবা অনুন্নত দেশ প্রায় সর্বত্রই এই সত্য উপলব্ধি করা যায়। পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ উদযাপন বাঙালির ঐতিহ্য। 

পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষের প্রভাব কেমন বাংলাদেশে

পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষের প্রভাব কেমন বাংলাদেশে তা এখন আলোচনা করবো। এখন থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলে গেলো। বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষের নতুন নাম দেয়া হয়েছে "বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা"। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছেন,মঙ্গল শব্দ দিয়ে এতদিন ফ্যাসিবাদের চর্চা হয়েছে কিন্তু এখন কারো চাপে নয় শোভাযাত্রার শুরুর সময় যে নাম ছিল সেই নাম ফিরিয়ে আনা হয়েছে। 

এবার পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষের প্রতিপাদ্য এবং মোটিভ মিলিয়ে শোভাযাত্রার মূল ধারণা থাকবে ফ্যাসিবাদ চর্চার বিনাশ,সব ধর্মবর্ণ এবং জাতির অংশগ্রহণ। পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষের নতুন ভাবে প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের মানুষ এখন নতুনভাবে জীবনকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে।  

অন্যান্য দেশে পহেলা বৈশাখ উদযাপন

বাংলাদেশ-ভারত এবং কানাডায় পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয়ে থাকে। কানাডার বাংলাদেশ হেরিটেজ অ্যান্ড আধুনিক সোসাইটি অফ আলবারটা অন্যান্য সংগঠনের সাথে বর্ণাঢ্যভাবে বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যের উৎসব উদযাপন করে থাকে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার অলিম্পিক পার্কে পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আবার ক্যালগোরির বাঙালিরা ঐতিহ্যবাহী খাবার এবং পোশাক-আশাক পরে বাঙালি সংস্কৃতির সাথে দিনটি উদযাপন করে থাকে।  

পুনরুদ্ধারকৃত বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রার ইতিহাস

পুনরুদ্ধারকৃত বৈশাখের আনন্দ সেবা যাত্রার ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নিন। ১৯৮৫ সালে যশোর থেকে শুরু হয় বাংলা নববর্ষের র‍্যালি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের আয়োজনে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আয়োজন বৈশাখ শোভাযাত্রা।  প্রথমদিকে আনন্দ শোভাযাত্রা নামে এর প্রচলন থাকলেও বেশ কয়েক বছর পর এর নাম পাল্টে করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। তাই বর্তমানে  পুরনো নাম (আনন্দ শোভাযাত্রা) ফিরে পেয়ে খুব খুশি হয়েছেন উদ্যোক্তারা। 

কেনো পহেলা বৈশাখ উদযাপনকে জাতীয় উৎসব হিসেবে পালন করা হয়

কেনো পহেলা বৈশাখ উদযাপনকে জাতীয় উৎসব হিসেবে পালন করা হয় তা জানা জরুরি। জাতীয় জীবনে সংঘটিত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা স্মরণ করে যে উৎসব পালন করা হয় তাই জাতীয় উৎসব হিসেবে পরিচিত। নববর্ষের উৎসবের যেমন সামাজিক দিক আছে ঠিক তেমনি জাতীয় দিকও আছে। সাম্প্রতিককালে জাতীয়ভাবে পহেলা বৈশাখ নববর্ষের উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে থাকে। এসব উৎসবে দেশের সকল শ্রেণীর মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে।  

লেখকের শেষ মন্তব্যঃপহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ২০টি বাক্য-পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ইতিহাস   

পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে বৃষ্টি বাক্য ১লা বৈশাখ উদযাপনের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়েছে এই আর্টিকেলে। পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের একটি অনবদ্য অংশ।উৎসব আনন্দ মানুষের অন্তরের জিনিস। একে তাই  সহজাত বলা চলে।

তাই দেখা যায় কোন কোন ধর্ম উৎসব-অনুষ্ঠান কে ভালো চোখে না দেখলেও আনন্দ পাবার জন্য এ ধরনের  উৎসব বা আনন্দ অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়।  আসলে জীবন শুধু কষ্টে কাটানো মুহূর্ত নয় তাই জীবনে আনন্দ না হলেও চলে না। তাই এ আনন্দ উপভোগের জন্যই মানুষ বিভিন্ন উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালন করে থাকে।

তবে "মঙ্গল শোভাযাত্রা" একান্তই হিন্দুদের অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে পরিচিত ছিল যা এখন নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে "বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রা" নামকরণ করা হয়েছে। এটা অনেকে ভালো বলে অভিহিত করেছেন। পরিশেষে বলা যায়,বাঙালিরা ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অটুট রাখতে পছন্দ করে। শুধুমাত্র এই কারণে এই দিনে হিন্দু-মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান বা অন্যান্য ধর্মের মানুষেরা আনন্দ প্রকাশ করে থাকে। 

        


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url